শেষ চিঠি
**** রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ****
তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,
তুমি জানো নি।
তুমি জানো নি। আমি প্রাণপণে চেয়েছি,
প্রেমের দাবি নিয়ে
তোমার হৃদয়ের দরজায় করিয়েছি করাঘাত।
সে দরজা ছিল বন্ধ।
অবহেলা করেছ আমায়।
তবু পরম আশায়
অবিরাম বেদনার বন্যা বয়ে গেছে চিত্তে।
তোমার ক্রোধ, তোমার ঘৃণা, তোমার গ্লানিতে
আমার আশার প্রদীপ নিবে যায় নি।
আজ বুঝেছি।
যে অমৃত তুমি রেখেছ
তোমার পাত্রের তলায়—
তাহা আমার জন্য নয়।
তোমার প্রেমের চরণতলায় রাখিয়া
যে পূজার অর্ঘ্য
আমি দিতে চেয়েছি
তোমার চরণ সেখানে পড়ে নাই।
তোমার হৃদয় ফিরিয়া চাহে নাই।
তোমার আত্মাভিমান
আমার আত্মদানের মূল্য দেয় নাই।
তুমি ভালো করিয়াছ।
তোমার চোখে আমি তুচ্ছ হইয়াছি—
তাহাই হওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু আমি যে তুচ্ছ।
এ আমার কপালের দোষ।
তাই আজ দূরে দাঁড়াইয়া বলি,
তুমি ভালো করিয়াছ।
আমার ব্যর্থ জীবনের ধূলি হতে
তোমার বীণার সুর উঠিয়াছে।
সে সুরের ক্ষতিপূরণ চাহি না।
তোমার প্রেম আমার চিত্তের দ্বারে আসে নাই।
কিন্তু তাই বলিয়া আমি তো কৃপণ নহি।
আমার প্রেম আমি দান করিয়াছি।
তাহা তুমি প্রত্যাখ্যান করিয়াছ।
তাই মনের তৃপ্তি হইল।
আমার প্রেমের মর্যাদা রহিল অক্ষুণ্ণ।
তোমার সুখী জীবনের মন্দিরে
আমার ব্যর্থ জীবনের ধূপ,
আমার চোখের জলের অর্ঘ্য,
আমার ব্যাকুল হৃদয়ের ব্যথা—
তাহা যদি একবার পৌঁছিয়া থাকে,
তাহা হইলেই যথেষ্ট।